মহামারী করোনার আতঙ্ক নিয়েই নতুন একটি বছর শুরু হল। নতুন আশা আর ভাল থাকার অনেক প্রত্যাশা রেখে সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা। ২০২১ এ করোনাকে জয় করে নতুন দিন সামনে আসুক।

বছরের শুরুটা অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে শুরু হলেও মার্চ ২০২০ থেকে দীর্ঘ দিন লক-ডাউন, তারপর নিয়ন্ত্রিত চলাচল। জীবনের নতুন অভ্যাস, নতুন বোধ নিয়ে বছর শেষ হল। কি জমা হল খাতায়?

করোনাকালের অর্জন ও উপলব্ধি নিয়েই আজকের লিখা, সাথে কিছু ছবি।

৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হবার পর, নিজেদের আতঙ্ক চেপে রাখলেও শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রবল আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা চোখে পড়ে। এর মধ্যেই বাজারে সংকট তৈরি হয় হ্যান্ড সানিটাইজারের। বিভাগের সহকর্মীদের সাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ফরমুলেশন ও তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হল । সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে সবার আগ্রহ এই কাজে উৎসাহ ও সাহস যোগাল অনেক। সহকর্মীদের নিয়ে শুরু হল WHO guideline মেনে ফরমুলেশনের কাজ। ফরমুলেশন, রাসায়নিক দ্রব্য সংগ্রহ শেষে শুরু হল রসায়ন বিভাগ, বুয়েটের ‘Hand Sanitizer Project’। কাজে জড়িয়ে পরলেন রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. আবু বিন ইমরান (Abu Bin Imran Imon), ড. আয়েশা শারমিন (Ayesha Sharmin, ড. শারমিন নিশাত (Sharmeen Nishat, ড. ইলিয়াস হোসেন (Elius Hossain), ড. মোঃ আইয়ুব আলি (Ayub Ali Shuvro), ড. চঞ্চল কুমার রায় (Chanchal Roy, ড. মাহবুব আলম (Md. Mahbub Alam) ও কাউসার আহমেদ (Kausar Ahmed)। এগিয়ে আসল রসায়ন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরাও। প্রাথমিক ফান্ড নিয়ে এগিয়ে আসল ফোরাম-৮৬ ( Rafiqul IslamWaz Uddin Wazed) এবং তাঁদের সহযোগিতায় তৈরি হল কয়েক হাজার Hand Sanitizer। বুয়েটের, ছাত্র কল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (মোঃ মিজানুর রহমান রফিক) উদ্বোধনে বিতরণ করা হল বুয়েটর বিভিন্ন অফিস, বিভাগ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে। করোনা দুর্যোগের শুরুতে রসায়ন বিভাগ, বুয়েটের এই উদ্যোগ প্রশংসিত হল সব জায়গায় ।

প্রথম আলো (Sudeepto Salam) একটি রিপোর্ট ও ভিডিও প্রতিবেদন করল রসায়ন বিভাগ, বুয়েটের Hand sanitizer নিয়ে।https://www.youtube.com/watch…

বুয়েটর বিভিন্ন্ ব্যাচ, মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, রক্ষি সহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি এগিয়ে আসল এই কাজে। এই কর্মযজ্ঞ নিয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রতিবেদন তৈরি করল।

Jamuna TV র একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হল ১৯ মার্চ ২০১৯।

https://www.facebook.com/JamunaTelevision/videos/1171417606522918

একই ভাবে রিপোর্ট ও প্রতিবেদন তৈরি করল ATN News, Channel 24, Dhaka tribune, Bangla Vision, bdnews24.com সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে এই প্রজেক্ট ছড়িয়ে পড়ল বুয়েটের বাইরে। প্রতিদিন তৈরি হতে থাকল শত শত লিটার। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, হসপিটালে সরবরাহ হতে থাকল। বুয়েটের বিভিন্ন ব্যাচের অনেকই ফান্ড সংগ্রহ করে Hand Sanitizer তৈরির প্রকল্পে জড়িয়ে পড়লেন। বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ল বুয়েটের তৈরি hand sanitizer। কাঁচামাল সঙ্কট ও বিভিন্ন কারণে একসময় বন্ধ করে দিতে হল আলোচিত এই প্রকল্প। করোনাকালের ক্ষুদ্র এই প্রচেষ্টায় নিজেকে, রসায়ন বিভাগকে তথা বুয়েটকে সম্পৃক্ত করতে পেরে আমি গর্বিত। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, ফোরাম-৮৬, রসায়ন বিভাগে আমার সহকর্মীগণ, রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের আমার প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীগণ ও বিভিন্ন সংগঠন যারা বিভিন্ন ভাবে এই কাজে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন।

Hand Sanitizer কার্যক্রম শেষ হলেও এপ্রিল মাসে Bangladesh Red Crescent Society-এর অনুরোধে সংযুক্ত হলাম তাঁদের জীনাবুনুশাক তৈরি ও এর ব্যবহার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি সম্পর্কিত বিভিন্ন কারিগরি কাজে ।

Hand Sanitizer ও বিভিন্ন রকমের Disinfectant, Disinfectant tunnel সহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য এবং এর প্রভাব সংক্রান্ত বিভিন্ন ভিডিও প্রতিবেদন, সাক্ষাতকার, আলোচনায় অংশগ্রনের মাধ্যমে নিজেকে এই দুর্যোগ মুহূর্তে সবার কাছে পৌঁছনের চেষ্টা করেছি সবসময়। এর মধ্যে ATN news এর একটি ভিডিও প্রতিবেদন ছিল উল্লেখযোগ্য

https://www.facebook.com/watch/?v=565771281043593

জীবাণুনাশক টানেলের মত অবৈজ্ঞানিক একটি ধারনার বিপক্ষে ছিলাম সবসময়। বাংলা ট্রিবিউন ও দৈনিক জনকণ্ঠে আমার বক্তব্যসহ প্রতিবেদনের হাত ধরে BTV একটি ভিডিও প্রতিবেদন ছিল অনেক প্রচারিত।

https://www.facebook.com/shfiroz/videos/10157297042613157

এই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন-এর একটি উপ-সম্পাদকীয় এবং আন্তর্জাতিক SME এর সাথে দেশকে সম্পৃক্ত করার উপর প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনও ছিল আলোচিত।

https://www.banglatribune.com/…/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0…

https://www.prothomalo.com/…/%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7…

এবার আসি একাডেমিক ও গবেষণা কার্যক্রম নিয়ে। ২০২০ বছরে ৮ টি

Journal Article, ১ টি Proceedings প্রকাশিত হয়েছে। ১ টি Articles accepted ও ২ টি Article under review অবস্থায় আছে। Conference proceedings এ ২ টি Article Accepted অবস্থায় আছে। এটা খুবই সামান্য কিন্তু এই প্রকাশনাগুলোর সবচেয়ে বড় সার্থকতা হল বিভাগের সহকর্মী, বুয়েটের অন্যান্য বিভাগ, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের বাইরে সাথে Collaboration Develop করতে পারা। Department কে 4iR এর উপযোগী ও বাংলাদেশ সরকারের Vision-2041 এ রসায়ন বিভাগকে সম্পৃক্ত করতে গবেষণা কাজে Interdisciplinary ও Intra- and Inter University Collaboration এর কোন বিকল্প নাই। বিভাগের সবাইকে নিয়ে এধরণের কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারাটাই এ বৎসরের সবচেয়ে বড় অর্জন।

রসায়ন বিভাগ, বুয়েটকে বাংলাদেশের রসায়ন গবেষণা ও উদ্ভাবনের Center of Excellence হিসাবে তৈরি করার ব্রত নিয়ে গত বছর দায়িত্ব নিয়েছিলাম বিভাগীয় প্রধান হিসাবে। করোনা সংকট এই কাজে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেও আমি আশা করছি বর্তমান চলমান কাজ ও বুয়েট প্রশাসনের গতিশীল নেতৃত্বে পরবর্তী বিভাগীয় প্রধান বিভাগকে একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাড় করাতে সক্ষম হবেন।

এই বছরের শুরুতে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। করোনাকালে কাঙ্ক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব না হলেও ক্লাবের Master Plan কে নিয়ে পরবর্তী কমিটি কাজ করলে এটি আসলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের Center of Activities হিসাবে গড়ে উঠবে।

করোনাকালের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আমার ভাবনা যা Bangla Tribune এ প্রকাশিত হয়েছিল। সেই ভাবনাগুলোর অনেক কিছুই আজ বাস্তব। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের কারিগরি ও সামাজিক দিকগুলো মাথায় রেখে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সেই ভাবনাগুলো, যেমন, শিক্ষার্থীদের Free internet, প্রয়োজনীয় Electronic Device, প্রয়োজনবোধে আর্থিক সহায়তা, শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য Zoom ও Microsoft team এর ব্যবহার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গৃহীত এইসব কার্যক্রমের সাথে নিজের সংযোগ অত্যন্ত আনন্দের। এই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনের গৃহীত কার্যক্রম সমূহ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে বলে আমার মনে হয়। আমি সবসময় BUET কে বাংলাদেশের Technology Hub হিসাবে গড়ে তোলার একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান মনে করি। এটি Engineering Education এ বাংলাদেশের সেরা প্রতিষ্ঠান। দৃষ্টির অগোচরে থাকলেও বুয়েটের Physics, Chemistry ও Mathematics বিভাগ তিনটি Research outcome ভিত্তি হিসাবে ধরলে উক্ত বিষয় সমূহে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অবশই প্রথম দিকে অবস্থান করবে। বুয়েট প্রশাসন এই তিনটি বিভাগকে নিয়ে ‘Faculty of Science’ গঠন করেছে। এখন প্রয়োজন এই বিভাগ তিনটির Expansion and Strengthening। প্রযুক্তির উদ্ভাবনের জন্য দরকার সঠিক Engineering and Science Education এবং এ দুটোর Fusion। Faculty of Science’ এর কার্যক্রম শুরু, বিভিন্ন বিভাগের Expansion and Strengthening এর মাধ্যমেই BUET কি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের Technology Hub? 4iR এর উপযোগী একটি জনগোষ্ঠী তৈরির প্রতিষ্ঠান? বাংলাদেশ সরকারের Vision-2041 বাস্তবায়নে ভরসার যায়গা?

২০২১ বিশ্ব করোনা মুক্ত হোক। সব কুসংস্কার ও সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে নতুন পৃথিবী গঠনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। Happy New Year!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

+10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *